মোঃ সেলিম রেজা, কেশবপুর প্রতিনিধি: যশোর জেলার কেশবপুর সাগরদাঁড়িতে চতুর্থ দিনে জমে উঠেছে মধুমেলা। সোমবার ২২ জানুয়ারি দুপুরে মধুমেলার মাঠে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে হাজার হাজার দর্শনার্থীদের পদচারণায় আনন্দ উচ্ছ্বাসে মুখরিত হয়ে উঠেছে সাগরদাঁড়ির মধুমেলার মাঠ।
জেলা প্রশাসকের আয়োজনে মেলা উদযাপন কমিটির সভাপতি ও যশোর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাসান মজুমদার সভাপতিত্বে মধুমেলা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের দিন থেকেই প্রতিদিনই বিকাল ৩টা থেকে মধুমঞ্চে অনুষ্ঠিত হচ্ছে আলোচনা সভা। মধুসূদনের সৃষ্টি, সাহিত্য ও কর্মজীবনের উপর বিষয় ভিত্তিক আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, দেশের খ্যাতিওনামা কবি,সাহিত্যিক, প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ, জন প্রতিনিধিগন, সাংবাদিকবৃন্দ ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা। আলোচনা সভা শেষে একই মঞ্চে অনুষ্ঠিত হচ্ছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিভিন্ন দলগত সংগীতানুষ্ঠানের পাশাপাশি দেশের খ্যাতিমান কণ্ঠ শিল্পীরা এখানে সংগীত পরিবেশন করছেন। প্রতিবারের ন্যায় মেলায় আগতদের মাঝে মেলা আকর্ষণীয় করে তুলতে মেলার উন্মুক্ত মঞ্চে যাত্রা, সার্কাস , ইজ্ঞিন ট্রেন, মৃত্যুকুপ, নাগোরদোলা, প্রদর্শন জাদুপ্রদর্শনীর ব্যবস্হা রয়েছে। ইহা ছাড়া মেলার মাঠে বসেছে নানা ধরনের আকর্ষনীয় সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এবার মধু জন্মবার্ষিকী ও মধুমেলা অশ্লীলতামুক্ত হচ্ছে। দিন দিন মধুমেলার মাঠে অনুপ্রাণিত হবেন লাখো মধুভক্তরা। সাগরদাঁড়ি কপোতাক্ষ নদের পাড়ে এ মেলা এখন এ অঞ্চলের মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ২০০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে গত শুক্রবার ১৯ জানুয়ারি থেকে যশোরের কেশবপুরের সাগরদাঁড়িতে শুরু হয়েছে ৯ দিনব্যাপী মধুমেলা। মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মদিন ২৫ জানুয়ারি। তবে এ জন্মদিনকে ঘিরে উৎসবের আয়োজন শুরু হয়ে যায় আগে ভাগেই। অন্যান্য বছর সাতদিন মেলার আয়োজন করা হলেও এ বছর ২০০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আরও দুই দিন বৃদ্ধি করে ৯ দিনব্যাপী মধুমেলার আয়োজন করেছে মধুমেলার আয়োজক কমিটি।প্রথমদিন থেকেই মেলার মাঠে ভিড় করতে শুরু করেছে স্থানীয় ও দূর-দূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীরা। দিনভর মেলার মাঠে সার্কাস-জাদু দেখছেন,চড়ছেন নাগরদোলায়। উপভোগ করছেন মৃত্যু কুপ । মিন্টু হোসেন নামে এক ব্যক্তি খুলনার পাইকগাছা থেকে পরিবারসহ এসেছেন মধুমেলা দেখতে। তিনি বলেন, প্রতিবছরই আসি মধুমেলা দেখতে। এবার পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছি। উজ্জ্বল দাস,জয়ন্তী বসু নামে দুই জন দর্শনার্থী বলেন, মধুকবি আর সাগরদাঁড়ি মানেই প্রাণের স্পন্দন জাগানো একটা ব্যাপার। এখানে এলেই মনটা ভরে যায়। আর মেলা মানে তো কোনো কথাই নেই। ঘুরছি, দেখছি, অনেক ভালো লাগছে।লিলিকা সরকার ও বিথিকা সরকার নামে আরো দুই জন দর্শনার্থী বলেন,আমরা সাতক্ষীরা থেকে এসেছি। আসতে কষ্ট হলেও এখানে এসে সে কষ্টটা ভুলে গেছি। বাচ্চারা নাগরদোলায় চড়ছে, সার্কাস দেখছে, আমাদেরও অনেক ভালো লাগছে।মধুমেলায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছেন ব্যবসায়ীরা। মেলা জুড়ে ৩৫১টি ছোটবড় স্টল রয়েছে। এ সব স্টলের মধ্যে রয়েছে খাবারের দোকান, কসমেটিকস, শিশুদের খেলনার দোকান, বাহারি মিষ্টির দোকান ইত্যাদি। এ বছর মেলা দুই দিন বৃদ্ধি করায় ভালো বেচাকেনা হবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।
মধুমেলায় কসমেটিকস্ এর প্রসাধনীর স্টল দিয়েছেন কুষ্টিয়ার জসীম  হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী। তিনি কলম কথা’কে বলেন, আমরা প্রতিবছরই দোকান দেই। আমরা তো বড় বড় মেলাগুলোকে টার্গেট করি বড় অংকের বেচাকেনার জন্য। এবছর মধুমেলা জমজমাট হচ্ছে, এখন পর্যন্ত ভালো বেচাকেনা হচ্ছে।
কেশবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ জহিরুল আলম বলেন, অতীতের ন্যায় ১৯ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে মধুমেলা।এ মেলাকে নিয়ে কোন বির্তকের সৃষ্টি করতে দেয়া হবে না। যে কোন উপায়ে মেলার সুশৃংঙ্খল পরিবেশ বজায় রাখতে প্রশাসন বদ্ধ পরিকর।